ব্যাক্তিগত আত্মরক্ষা কি?আইনে কি বলা আছে?

ব্যাক্তিগত আত্মরক্ষা(Private defence) হল সেই অধিকার যখন কোন ব্যাক্তির নিজের সম্পতি বা দেহের ক্ষতি সাধন হতে পারে বা অন্য ব্যাক্তির সম্পতির বা দেহের উপর ক্ষতি সাধিত হতে পারে তখন নিজের বা অন্যের দেহ ও সম্পতি রক্ষার জন্য যে পাল্টা আক্রমন করা হয় তাকে ব্যাক্তিগত প্রতিরক্ষা বলা হয়।ব্যাক্তিগত প্রতিরক্ষার কথা দন্ডবিধির ধারা ৯৬-১০৬ পর্যন্ত আলোচনা করা হয়েছে।
ব্যাক্তিগত প্রতিরক্ষার ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয় ২টি ক্ষেত্রে যথাঃ১)নিজের বা অন্য কারোর দেহ রক্ষা করার জন্য।(২)নিজের বা অন্য কারোর স্থাবর বা অস্থাবর সম্পতি রক্ষা করার জন্য।ব্যাক্তিগত প্রতিরক্ষার জন্য যে কোন ব্যাক্তির বিরুদ্ধে অগ্রসর হওয়া যায় এমন কি আঘাতকারি যদি পাগল,তরুন,অপরিণত বিবেগবান হয় তাহা হলেও তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করা যাবে।ধারা ৯৮ এ এই বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
কখন আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা যাবে না এ বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে ধারা ৯৯ এ যথাঃ

সরকারি কর্মকর্তার কর্তব্য পালন কালে কৃত কোন কাজের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার প্রতিকার পাওয়া যাবে না।
কোন সরকারি কর্মকর্তার নির্দেশে কোন ব্যাক্তির কৃত কোন কাজের বিরুদ্ধে।
যেখানে সরকারি কতৃপক্ষের আশ্রয় নেয়ার সময় থাকে।
কিন্তু যেক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার অধিকার খর্ব হবে নাঃ
যখন কোন সরকারি কর্মকর্তার নির্দেশে অন্য কোন কর্মকর্তার কাজের ফলে মৃতু্্য বা গূরুতর আঘাতের আশংকা সৃষ্টি করে।
যদি না কোন ব্যাক্তি জানে বা বিশ্বাস করার কারন থাকে যে, অনুরুপ ব্যাক্তি সরকারি কর্মকর্ত নয়।
প্রয়োজনের বেশি আঘাত করা যাবে না।
এই ধারাটি হল ব্যাক্তিগত প্রতিরক্ষার একটি ব্যাতিক্রম ধারা।
যে সব ক্ষেত্রে দেহরক্ষা করতে গিয়ে মৃত্যু ঘটানো যায়ঃ
দন্ডবিধির ধারা ১০০ অনুযায়ী ৬টি ক্ষেত্রে দেহরক্ষার জন্য মৃতু ঘটানো যায় সেগুলা হল-
-এমন আক্রমন যার ফলাফল একমাত্র মৃত্যু

  • এমন মারাত্মক আঘাত যার ফলাফল এক মাত্র মৃত্যু -যদি ধর্ষনের অভিপ্রায় নিয়ে আক্রমন করে -অসাভাবিক কামনা করনের ইচ্ছায় আক্রমন -কিডনাপিং এর জন্য চেষ্টা করলে -অবৈধভাবে আটক রাখার জন্য আক্রমন করলে।তবে উপরের ৬টি ক্ষেত্র ছাড়া আত্মরক্ষার জন্য পাল্টা আক্রমন করে ক্ষতি করা যাবে কিন্তু মৃত্যু ঘটানো যাবে না। ধারা (১০১)। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই দেহের আত্মরক্ষার প্রয়োগ কাল কতক্ষন থাকবে?দন্ডবিধির ধারা ১০২ এ বলা হয়েছে যে-যখন দেহের উপর হুমকির কারনে দেহের প্রতি বিপদের আশাংকা দেখা দেয় তখন থেকেই আত্মরক্ষার অধিকার সৃষ্টি হয় এবং যতক্ষণ পর্যন্ত এই আশাংকা থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত আত্মরক্ষার অধিকার বিদ্যমান থাকবে। সম্পতি হল সবার আমুল্ল্য জিনিস এটা কে রক্ষা করার জন্য কি কি করতে হবে আইন তা বলে দিছে।দন্ডবিধির ধারা ১০৩ এ বলা হয়েছে ৪ ক্ষেত্রে সম্পতি রক্ষা করতে গিয়ে মৃত্যু ঘটানো যাবে সেগুলা হলঃ -যদি কেউ দস্যুতা করার চেষ্টা করে -রাতের বেলায় কেউ যদি ঘরে প্রবেশ করে -সম্পতির বা বাসগৃহে সংরক্ষনের স্থানে অগ্নিসংযোগ করে
    • চুরি,অনধিকার গৃহে প্রবেশের জন্য যদি মারাত্মক আঘাত বা মৃত্যুর আশংকা সৃষ্টি হয় তখন সম্পতি রক্ষার জন্য মৃত্যু পর্যন্ত ঘটানো যায়।কিন্তু উপরের ৪টি ক্ষেত্র ছাড়া সম্পতি রক্ষার জন্য মৃত্যু বাদে অন্য ক্ষতি করা যাবে দন্ডবিধির ধারা ১০৪ এ বলা হয়েছে।
      সম্পতি রক্ষার জন্য ও আত্মরক্ষার সময়সীমা দেয়া হয়েছে আইনে সেগুলা হলঃ
      -যতক্ষন পর্যন্ত সম্পতির উপর অনিষ্ট বা দখলচু্্যত হয়ার আশাংকা থাকবে ততক্ষন পর্যন্ত আত্মরক্ষার অধিকার থাকবে।
      -যতক্ষন এমন বিপদ বিদ্যমান থাকবে ততক্ষন ও আত্মরক্ষার অধিকার বিদ্যমান থাকবে।
      এখানে অন্য একটা বিষয় জানা দরকার সেটি হল যখন এমন মারাত্মক আক্রমনের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার জন্য যদি কোন নির্দোষ ব্যাক্তির ক্ষতি হয় তাহলেও তা
      অপরাধ হবে না।(দন্ডবিধির ধারা ১০৬)।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

× Chat