ফৌজদারী কার্যবিধি অনুসারে জামিনের বিধান

আমাদের ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর ৪(১)(খ) নং ধারায় ফৌজদারি অপরাধগুলোকে জামিনযোগ্য ও জামিনের অযোগ্য_ এই দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে।

একই সঙ্গে ফৌজদারি কার্যবিধির ২ নং শিডিউলের ৫ নং কলামে অপরাধগুলোর

প্রকৃতির, তা পৃথক পৃথকভাবে বলা আছে।
জামিনযোগ্য অপরাধে জামিনের বিধান: ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৬ নং ধারায় জামিনযোগ্য মামলায় জামিনের বিধান বলা হয়েছে। এই ধারা অনুসারে, জামিনযোগ্য যেকোনো অপরাধের ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি জামিন পাওয়ার অধিকারী। ১৫ ডিএলআরএ এ সংক্রান্ত সুপ্রিমকোর্টের একটি মামলার রায়ে বলা হয়েছে, জামিনযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তির জামিন পাওয়ার অধিকারটি অলঙ্ঘনীয়। সন্তোষজনক সিকিউরিটি প্রদানের মধ্য দিয়েই একজন ব্যক্তি এসব অপরাধের মামলায় জামিন পেতে পারেন।

জামিনের অযোগ্য অপরাধে জামিনের বিধান : ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ নং ধারায় জামিনের অযোগ্য মামলায় একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি কিভাবে জামিন পেতে পারেন, তার বিধান বর্ণিত আছে। ওই ধারা মোতাবেক, এধরনের অপরাধে আসামি আদালতের কাছে ‘অধিকার’ হিসেবে জামিন দাবি করতে পারবেন না। তবে আদালতের মর্জি হলে এ ধরনের অপরাধেও অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জামিন দিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে আদালতের ‘ঐচ্ছিক ক্ষমতা’ রয়েছে। অর্থাৎ জামিনের অযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি জামিন পাবেন কি না_ সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে আদালত স্বাধীন। তবে এ ধরনের স্বাধীনতা চর্চা হতে হবে বিচারিক নীতিমালার ভিত্তিতে। খেয়ালখুশিমতো জামিন মঞ্জুর কিংবা নামঞ্জুর করা যাবে না।
৪৯৭ নং ধারায় বলা হয়েছে, মামলার নথিপত্র দেখে যদি মনে হয় যে, সংশ্লিষ্ট অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির জড়িত থাকার সম্ভাবনা অস্পষ্ট, তাহলে বিজ্ঞ আদালত জামিনের অযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জামিন দিতে পারেন।

যেসব অপরাধে মৃত্যুদন্ড কিংবা যাবজ্জীবন কারাদন্ডে সাজা হয়ে থাকে, সেসব অপরাধের মামলায় জামিন মঞ্জুর করার ব্যাপারে আদালত সাধারণত খুব একটা আগ্রহী হন না। তবে মামলার নথিপত্র থেকে যদি এই কথা মনে হওয়ার সুযোগ থাকে যে, এই মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মিথ্যা ও হয়রানিমূলকভাবে জড়ানো হয়েছে, সে ক্ষেত্রে এ ধরনের গুরুতর মামলায়ও অভিযুক্ত ব্যক্তি আদালতের মর্জি মোতাবেক জামিন পেতে পারেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

× Chat