দেনমোহর কি?
বিবাহবন্ধনের মাধ্যমে স্ত্রী স্বামীর নিকট থেকে শরীয়তসম্মত ভাবে যে অর্থ সম্পদ লাভের অধিকারী হয় সেই অর্থ সম্পদ কে দেনমোহর বলে।বিবাহের মোহর সম্পর্কে কোরআনের বিধান আছে যে স্ত্রীই শুধুমাত্র বিবাহের মোহর গ্রহণ করতে পারবে।স্বামী তাকে এই মোহর প্রদান করবে।বিশেষ ভাবে মনে রাখতে হবে যে মোহর কোন যৌতুক না।দেনমোহরের চুক্তি মৌখিক বা লিখিত হতে পারে। দেনমোহর একজন মুসলিম নারীর বিশেষ অধিকার যা কোরআনের মাধ্যমে স্বীকৃত দেওয়া হয়েছে।এটি স্বামীর উপর আরোপিত একটি দায় যা আইন দ্বারা স্বীকৃত। বিবাহ একটি চুক্তি এই চুক্তি সম্পাদনের প্রধান ও অন্যতম শর্ত হলো দেনমোহর।এই শর্তটি পূরন ব্যতীত কোন বিবাহ বৈধ রুপ নিতে পারে না।দেনমোহর হলো স্ত্রীর প্রতি সম্মানের প্রতীক।বিয়ে রেজিস্ট্রি হোক বা না হোক স্ত্রী তার স্বামীর নিকট থেকে মোহরানা পাবার অধিকারী।
সুতরাং বিয়ের অনুষ্ঠানে স্বামী তার স্ত্রীকে মর্যাদাস্বরুপ যে অর্থ বা সম্পদ দেয় বা দেয়ার অঈীকার করে তাকে দেনমোহর বলে।
দেনমোহর প্রধানত দুই প্রকার যথা:
১)নির্দিষ্ট দেনমোহর(মোহরে মুসাম্মা)
২)উপযুক্ত দেনমোহর(মোহরে মিসলে)
নির্দিষ্ট মোহর কাকে বলে?
যেক্ষেত্রে বিবাহের সময় বা বিবাহের পরে বা বিবাহের চুক্তিতে স্বামী স্ত্রী নিজেদের মধ্যে বা তাদের পক্ষে যে মোহর নির্ধারণ করা হয় তাকে নিদিষ্ট মোহর বা মোহরে মুসাম্মা বলে।
উপযুক্ত মোহর কাকে বলে?
যেক্ষেত্র বিবাহের চুক্তিতে বা বিবাহের পূর্বে মোহরানা নির্ধারণ করা না থাকে তাহলে আদালত উহা নির্ধারন করে দিবেন।যেমন পিতার পরিবারের অন্যান্য বোনদের নির্ধারিত দেনমোহর বিবেচনা করে এবং আরও কতিপয় বিচার বিবেচনা করে আদালত তার জন্য যে পরিমান মোহর যথাযোগ্য বলে ধায্য করেন উহাকে উপযুক্ত দেনমোহর বা মোহরে মিসলে বলে।
বিয়ের সময় দেনমোহর নির্ধারণ না হলে সেক্ষেত্রে যা হবে:
১৯৬১ সালে মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশের ১০ ধারা মোতাবেক দেনমোহর প্রদানের পদ্ধতি সম্পর্কে কাবিনে কিছু উল্লেখ না থাকলেও স্ত্রী চাহিবামাত্র সম্পুর্ন টাকা পরিশোধ করতে হবে।কোন বিবাহে দেনমোহরের কথা না থাকলেও আইন স্ত্রীকে দেনমোহরের অধিকার প্রদান করেছে।
স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করলে কিংবা তালাক দিলে সেক্ষেত্রে করণীয়:
স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করলে তার স্ত্রীকে সম্পূর্ন দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করতে হবে দেনমোহর স্ত্রীর কাছে স্বামীর দায় তাই যে কোনো সময় স্ত্রী তা দাবি করতে পারে।
স্বামীর মৃতুর পর স্ত্রীর দেনমোহর আদায় কিভাবে হবে?
স্বামীর মৃতুর পর দেনমোহর অন্যান্য দেনার মতই তা পরিশোধ করতে হবে।স্বামীর মৃতুর পর তার দাফন কাফনের খরচ করার পর অবশিষ্ট সম্পত্তি থেকে দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে এমনকি দেনমোহরের জন্যে স্বামীর উওরাধিকারীদের বিরুদ্ধে মামলা ও করতে পারবে স্ত্রী।যদি স্বামীর আগে স্ত্রী মারা যায় তা হলেও স্ত্রীর দেনমোহর পাওয়ার অধিকার থেকে। এক্ষেত্রে ও স্ত্রীর উওরাধিকারীরা মামলা ও করতে পারবে।
তাৎক্ষণিক ও বিলম্বিত দেনমোহর কি?
নিদিষ্ট মোহরের মোট পরিমানকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা যায় তার মধ্যে যেই ভাগ চাহিবামাত্র পরিশোধ যোগ্য তাকে তাৎক্ষণিক দেনমোহর(Prompt Dower) বলে অন্যদিকে যেই ভাগ তালাক বা মৃতুর মাধ্যমে বিবাহের পরিসমাপ্তি ঘটিলে পরিশোধ যোগ্য তাকে বিলম্বিত দেনমোহর(Deferred Dower)বলে।
দেনমোহর চেয়ে না পেলে একজন স্ত্রী যা যা করতে পারবে:
১)স্বামীর সাথে সাথে বসবাস করতে অস্বীকার করতে পারে।
২) দাম্পত্য মিলনে অস্বীকার করতে পারে।
৩)এ সময় স্ত্রী চাইলে স্বামীর থেকে দূরে বসবাস করতে পারে।
নোট: স্ত্রী স্বামীর থেকে এ সময় দূরে থাকলেও স্বামী স্ত্রী কে ভরণপোষণ দিতে বাধ্য থাকবে।যদি স্বামী দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের মামলা ও করে সে মামলা খারিজ হয়ে যাবে।
ভরণপোষণ দেনমোহর বলে বিবেচিত হবে কি না?
না ভরণপোষণ ও দেনমোহর দুটি সম্পুর্ন ভিন্ন বিষয়। দেনমোহরের সাথে ভরণপোষণের কোন সম্পর্ক নেই।বিবাহ বলবত থালাকালিন স্বামী স্ত্রী কে ভরণপোষণের জন্য যা দেয় তা দেনমোহর না।
স্বামী স্ত্রীকে কোন উপহার দিলে সেটা দেনমোহর হিসেবে গন্য হবে?
না স্বামী স্ত্রীকে যদি কোনো উপহার দেয় সেটা দেনমোহর হিসেবে গন্য হবে না।বিয়ের পর স্বামী তার স্ত্রীকে অনেক কিছুই দিতে পারে কিন্তু সেটি দেনমোহর বলা যাবে না।যদি দেনমোহর দেয় তাহলে সেখানে উল্লেখ করে বলে দিতে হবে দেনমোহর বাবদ এত টাকা দিলাম।
স্ত্রী কি দেনমোহরের টাকা মওকুফ করতে পারে?
জ্বি পারে একজন স্ত্রী তার দেনমোহরের টাকা চাইলে সম্পুর্ন অথবা আংশিক মওকুফ করতে পারে তবে সেটা অবশ্যই স্ত্রীর পূর্ণ সম্মতি তে হতে হবে।
দেনমোহরের মামলা ও তামাদির মেয়াদ:
তাৎক্ষণিক বা আশু দেনমোহরের ক্ষেত্রে স্বামী দিতে অস্বীকার করলে সেদিন থেকে তিন বৎসরের মধ্যে মামলা দায়ের করতে হবে অপরদিকে বিলম্বিত দেনমোহরের ক্ষেত্রে সময় হলো মৃতু বা তালাকের ফলে বিবাহবিচ্ছেদের দিন থেকে তিন বৎসরের মধ্যে মামলা দায়ের করতে হবে যদি এর ভেতর মামলা না করা হয় তাহলে মামলা টি তামাদি হয়ে যাবে।
নোট:দেনমোহরের মামলা দায়ের করতে হয় পারিবারিক আদালতে আমাদের দেশে সকল সহকারী জজ যা পারিবারিক আদালত নামে পরিচিত এবং মামলা পরিচালনা করে আসছে।