তালাক কি-কত প্রকার ও তালাকের আইন গতদিক

তালাক কি?

তালাক একটি আরবি শব্দ। যার আক্ষরিক অর্থ হলো বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করা,পরিত্যাগ করা বা বন্ধনমুক্ত করা।যদি স্বামী স্ত্রীর মধ্যে এমন হয় যে তাদের আর এক সাথে বসাবাস করা সম্ভব হয় না সেক্ষেত্রে তারা কোনো নিদিষ্ট উপায়ে বিবাহ বিচ্চেদ ঘটাতে পারে। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করার মাধ্যম হলো তালাক বা ডিভোর্স। একজন স্বামী যেমন তার স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে ঠিক তেমনি ভাবে একজন  স্ত্রী ও তার স্বামী কে তালাক দিতে পারে। স্ত্রীর এই অধিকার ১৯৩৯ সালে মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন দ্বারা স্বীকৃত দেওয়া হয়েছে। একজন পুরুষ কোন কারন ব্যাতিরেকে তার স্ত্রীকে তালাক প্রদান করতে পারে।সাধারণত তালাকের মাধ্যমে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়ে থাকে। একজন পুরুষ ইলা এবং জিহান এর মাধ্যমে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে যদিও তার ফলাফল তালাকের মতই কিন্তু তালাক থেকে কিছুটা ভিন্ন হয়।

বাংলাদেশে তালাকের বিধান মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১ সালের ধারায় বর্ননা করা হয়েছে নিন্মে আলোচনা করা হলো:

১৯৬১ সালের মুসলিম পরিবার আইন অধ্যাদেশ এর ৭ ধারার বিধান মতে,

)কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তালাক দিতে চাইলে যেকোনভাবেই হউক তালাক উচ্চারণ করার পর সে তালাক দিছে বলে চেয়ারম্যান কে লিখিত নোটিশের মাধ্যমে জানাবে এবং স্ত্রীকেও উহার একটি কপি পাঠাবে।

)কোন ব্যক্তি (১)উপধারার বিধান লংঘন করলে সে এক বৎসর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ডে বা দশ হাজার টাকা পর্যন্ত অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে।

)এই আইনের (৫) উপবিধির বিধানানুযায়ী অন্য কোনভাবে প্রকাশে বা অপ্রকাশ্য কোন তালাক পূর্বাহে প্রত্যাহার না করা হলে আলোচ্য (১) উপধারানুযায়ী চেয়ারম্যানের নিকট প্রেরিত নোটিশের তারিখ হতে নব্বই দিন অতিক্রম না হওয়া পর্যন্ত উক্ত তালাক কার্যকরী হবে না।

)অএ আইনের (১) উপধারানুযায়ী নোটিশ প্রাপ্তির ত্রিশ দিনের ভিতর চেয়ারম্যান পক্ষদ্বয়ের মধ্যে পুনর্মিলনের উদ্দেশ্য একটি সালিসী কাউন্সিল গঠন করবেন ও এই কাউন্সিল পুনর্মিলন ঘটানোর উদ্দেশ্য সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

)তালাক প্রদানের সময় স্ত্রী যদি গর্ভবতী থাকে তাহলে এই আইনের (৩) উপধারায় বর্ণিত মেয়াদ বা গর্ভকাল এই দুই এর মধ্যে যাহা পরে শেষ হবে তাহা অতিক্রম না হওয়া পর্যন্ত উক্ত তালাক কার্যকরী হবে না।

)এই ধারানুসারে কার্যকরী তালাকের মাধ্যমে যে স্ত্রীর বিবাহ ভঙ্গ হইছে ঐ বিবাহ ভঙ্গ তৃতীয়বারের মত কার্যকরী না হলে তৃতীয় ব্যক্তির সহিত মধ্যবর্তীকালীন কোন বিবাহ ব্যতীতই তার আগেত স্বামীর সহিত পুনর্বিবাহ কোন ধরনের বাধা থাকবে না।

 ধারা ৮ অনুযায়ী তালাক ব্যতীত অন্যভাব বিবাহ ভঙ্গ:

যেইক্ষেত্রে স্ত্রীর নিকট তালাক প্রদানের অধিকার যথাযথ ভাবে অর্পণ করা হইছে এবং সে এই অধিকার প্রয়োগ করতে চাই অথবা যেইক্ষেত্রে বিবাহের যেকোন পক্ষ তালাক ব্যতীত অন্যভাবে বিবাহ ভঙ্গ করতে চাই সেইক্ষেত্রে প্রয়োজনমত পরিবর্তনসহ ও যতদূর পর্যন্ত প্রয়োগযোগ্য ততদূর পর্যন্ত ৭ ধারার বিধানাবলী প্রযোজ্য হবে।

বিবাহ বিচ্ছেদের বিভিন্ন পদ্ধতি আলোচনা করা হলো:

)আদালতের হস্তক্ষেপ ব্যতীত,স্বামীর ইচ্ছানুযায়ী

)স্বামী স্ত্রীর পারস্পরিক সম্মতির মাধ্যমে

)স্বামী বা স্ত্রী দ্বারা আনীত কোনো মামলায় আদালত কর্তৃক আদেশ এর মাধ্যমে।

তালাক প্রধানত ৩ প্রকার নিন্মে উল্লেখ করা হলো:

()তালাক ই আ্হসান

()তালাক উল বিদাত

()তালাক ই হাসান।

)তালাক ই আহসান:এইটা তালাকের একক উচ্চারণ এবং তালাক প্রদানের কথা উচ্চারনের পর থেকে ইদ্দতের মেয়াদ পর্যন্ত(৩ ঋতুকাল) স্বামী স্ত্রী যদি যৌনমিলন থেকে বিরত থাকে এবং ইদ্দতকাল পার হয়ে যাওয়ার পরেই তালাক অখন্ডনীয় তালাকে পরিনত হয়ে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটবে।

)তালাক উল বিদাত:ইসলামের দ্বিতীয় শতাংশে এই তালাকের প্রচলন ছিল।এটির মূলত ধরন দুটি যথা-

মেয়েদের যখন মাসিক মুক্ত থাকে তখন তিন তালাক এক বাক্য উচ্চারণ করে স্ত্রী কে তালাক দেওয়া হয়।

অন্য ধরনটি হলো যে কোন তহুরে এক বাক্য উচ্চারণ করার মাধ্যমে স্ত্রীকে তালাক প্রদান করা হয়ে থাকে।

)তালাক ই হাসান:এ ধরনের তালাকের ক্ষেত্রে পর পর তিনটি তহুরে তিনবার তালাক দিতে হয় এবং প্রথম তালাক উচ্চারণ করা থেকে তৃতীয় তালাক উচ্চারণ করার সময় পর্যন্ত স্বামীকে স্ত্রীর সাথে যৌন মিলন থেকে বিরত থাকতে হয় এবং তৃতীয় তহুরে তালাক উচ্চারণ করার সাথে সাথে অখন্ডনীয় তালাকে পরিনত হয়ে যায়।

ইলা কি?

উত্তর :তালাকের উপরোক্ত উপায় গুলি ছাড়া ও একজন মুসলিম স্বামী তার স্ত্রীকে ইলার মাধ্যমে তালাক দিতে পারে।যখন স্বামী তার স্ত্রীর সাথে যৌনমিলন না করার শপথ নেন এবং এই শপথ গ্রহন করার পর থেকে চার মাস স্ত্রীর সাথে যৌনমিলন থেকে বিরত থাকে তাকে ইলা বলে এবং চার মাস পর স্ত্রীর সাথে বিবাহের সমাপ্তি হয় ও অপ্রত্যাহারযোগ্য তালাকে পরিনত হয়।

জিহার কি?

উত্তর:এই পদ্ধতিতে স্ত্রী তালাকের ক্ষেত্রে স্বামী তার স্ত্রীকে বিবাহ নিষিদ্ধ সম্পর্কিত কোন মহিলার সাথে স্ত্রীকে তুলনা করে থাকে অন্যভাবে যদি বলি স্বামী যদি তার স্ত্রী কে মা অথবা বোন এর সাথে তুলনা করে থাকে এবং যৌনমিলন থেকে চার মাস বিরত থাকে তাহলে এর মাধ্যমে স্ত্রীর তালাক হতে পারে।ইহাকে জিহার বলা হয়।

নোট:স্বামী তার স্ত্রী কে যেকোনো কারনে যেকোনো সময় তালাক দিতে পাতে কিন্তু একজন মুসলিম স্ত্রী তার স্বামী কে যেকোনো সময় তালাক দিতে পারে না যদি না কাবিননামার ১৮ নং কলামে তালাক প্রদানের ক্ষমতা দেয়া হয়ে থাকেএই ক্ষেত্রে স্ত্রী আরো কয়েকটি ধাপের মাধ্যমে স্বামী কে তালাক দিতে পারে মুসলিম পারিবারিক আইনের ধারায় তালাকের অধিকার স্ত্রীগণকেও পুরুষের ন্যায় দেওয়া হয়েছে

তালাকের নোটিশ প্রদান:

কেউ যদি তার স্ত্রীকে তালাক দিতে চাই বা স্ত্রী যদি স্বামীকে তালাক দিতে চাই তাহলে সেই তালাকের নোটিশ লিখিতভাবে স্ত্রী বা স্বামী যে এলাকায় বসবাস করে সেই এলাকার চেয়ারম্যান বা মেয়রকে রেজিস্ট্রার্ড ডাকযোগে প্রাপ্তি স্বীকারপত্র সহ পাঠাতে এবং সেই তালাকের অপর একটি কপি স্বামী বা স্ত্রী বরাবর পাঠাতে হবে।

তালাকের নোটিশ পাঠানোর সময় যদি স্ত্রী গর্ভবতী হয় সেক্ষেত্রে কি হবে?

উত্তর:তালাকের নোটিশ পাঠানোর সময় যদি স্ত্রী গর্ভবতী হয় সেক্ষেত্রে সন্তান প্রসব না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হবে না যদিও নির্ধারিত ৯০ দিন অতিবাহিত হয়ে যায়।

ইদ্দত কি?

ইদ্দত এর আক্ষরিক অর্থ হলো সংখ্যা, দিন গণনা করা।ইদ্দত একটি আরবি শব্দ।তালাক বা মৃতুজনিত কারনে বিবাহ ছিন্ন হবার পর যে সময়ের মধ্যে স্ত্রী পূণরায় বিবাহ করতে পারে না তাকে ইদ্দত বলে।

ইদ্দত কখন থেকে শুরু হয় নিন্মে আলোচনা করা হলো:

)স্বামীর মৃতুর দিন থেকে বা তালাকের দেয়ার দিন থেকে এক্ষেত্রে যদি স্বামীর মৃতু দ্বারা বিবাহ বিচ্ছেদ হয় তাহলে ইদ্দতের সময় হবে চার মাস দশ দিন আর তালাক দ্বারা বিবাহ বিচ্ছেদ হয় সেক্ষেত্রে তিনটি ঋতুকাল।

)যৌনমিলন না হলে ইদ্দত পালনের প্রয়োজন নাই।

)মৃতুর সংবাদ ইদ্দতের সময় কাল পেরিয়ে যাবার পর তার অথাৎ স্ত্রীর নিকট পৌছালে ইদ্দত পালনের দরকার নাই।

)ইদ্দত চলাকালীন সময়ে বিবাহ করলে সে বিবাহ অনিয়মিত বিবাহ হিসেবে গন্য হবে।

)সন্তান জন্মিলে বৈধ হবে।

)স্বামী স্ত্রীর কেও মারা গেলে কেউ কারোর সম্পত্তির উওরাধিকার হবে না।

ইদ্দতকালে স্বামী স্ত্রীর দায়িত্ব কি হবে?

)অন্য বিবাহ করতে পারবে না।

)স্ত্রী স্বামীর থেকে ক্ষেত্রে বিশেষ ভরণপোষণ আদায় করতে পারবে।

)ইদ্দতকালে স্ত্রী নির্ধারিত মোহরানা পাবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

× Chat